
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সহিংসতার আশংকায় ভারতের কর্নাটক ও উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। একই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে দেশটির রাজধানী দিল্লিও।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোর ৬টা থেকে টানা ৩ দিন, অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত কর্নাটক ও দিল্লিতে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে এই বিশেষ নির্দেশ কার্যকর রয়েছে বুধবার দিবাগত গভীর রাত থেকে।
কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুসহ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় এই ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। অর্থাৎ সেসব এলাকায় ৫ জনের বেশি মানুষ জমায়েত হতে পারবে না। আর উত্তরপ্রদেশে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে পুরো রাজ্য জুড়েই।
বুধবার উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছিল, পুরো রাজ্যের কোথাও ওই দিন সভা বা মিছিল করতে দেয়া হয়নি। তবে সমাজবাদী পার্টিসহ কয়েকটি সংগঠন আইন অমান্য করেই বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করার ঘোষণা দেয়। পরে সেখানে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দেয় পুলিশ।
জানমাল রক্ষার পাশাপাশি রাজ্যের সব কাজকর্ম যেন স্বাভাবিকভাবে চলে সেজন্যই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও।
বুধবার গভীর রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে… কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল চলার সময় পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে যার ফলে অনেক সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন এবং ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।’
‘তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর এমন কিছু হতে দেয়া যাবে না। আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর ৬টা থেকে ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত বেঙ্গালুরুসহ বেশ কিছু এলাকায় নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ জারি থাকবে। এ সময় কোনো রকম বিক্ষোভ বা মিছিল করতে দেয়া হবে না।’
এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, সব ধরনের অফিস, বাণিজ্যিক স্থাপনা, সিনেমা হল, শপিং মল স্বাভাবিকভাবেই খোলা থাকবে। কমিশনার বলেন, তরুণরা স্কুল-কলেজে যেতে পারবে, তবে কোনো বিক্ষোভে অংশ নিতে পারবে না।
তবে বেঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার কর্নাটকের সব অঞ্চলের স্কুল-কলেজ খোলা থাকার কথা বললেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কালাবুরাগিসহ বেশ কিছু অঞ্চলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাজধানী দিল্লির লাল কেল্লাসহ বেশ কিছু এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আপাতত সেখানকার ১৪টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া মুম্বাই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকায় সেখানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধী দল ও সংগঠনগুলো মিলে ‘হাম ভারত কে লোগ’ নামে একটি ফ্রন্ট গঠন করেছে। জোটটি সিএএ এবং এনআরসি’কে (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) ‘অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক’ উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ কর্মসূচির পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে।
আজ ভারতজুড়ে ১০টিরও বেশি প্রধান শহরে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি হওয়ার কথা। এর মাঝে এই ১৪৪ ধারা চলমান আন্দোলনে ভাটা ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি’র প্রতিবাদে রাজধানী নয়াদিল্লিসহ বিক্ষোভে উত্তাল ভারতের বিভিন্ন রাজ্য। আইনটির প্রতিবাদে প্রায় এক সপ্তাহ আগে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল আসাম, মেঘালয় আর ত্রিপুরায়। আইনটির বিরুদ্ধে রোববার রাতে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হলে সোমবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
রাষ্ট্রপতির কাছে আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীসহ বিরোধীদলীয় নেতারা।
তবে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সরকার অনড় বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পত্তিতে কোনো ধরনের সহিংসতা চালালে দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ অঙ্গদি।
পাঠকের মতামত